বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিন ( ১৭০৬-১৭১০) প্রমাণ করেন যে, ইলেকট্রিক ডিসচার্জের কারণে বজ্রপাত (Lightning Stroke) সৃষ্টি হয়। মেঘ এবং আর্থের মধ্যে অথবা মেঘ ও মেঘের মধ্যে অথবা একই মেঘের চার্জ কেন্দ্রের মধ্যে বৈদ্যুতিক ডিসচার্জকে লাইটনিং বা বজ্রপাত বলা হয়। যখন মেঘের চার্জ ভূপৃষ্ঠের তুলনায় অথবা আশপাশের জন্য মেঘের তুলনায় খুব বেশি থাকে তখন লাইটনিং সংঘটিত হয়। কারণ এ সময় আশপাশের বাবুরের ইনসুলেশন ব্রেক করে লাইটনিং স্ট্রোকের সৃষ্টি হয়।
পৃথিবীতে প্রতিদিন হাজার হাজার লাইটনিং সহ ঝড় বৃষ্টি হয়ে থাকে। আবার সব লাইটনিং স্ট্রোক পৃথিবী পর্যন্ত এসে পৌঁছায় না, পথেই নিঃশেষ হয়ে যায়। লাইটনিং স্ট্রোক সাধারণত ওভারহেড বৈদ্যুতিক লাইন এবং আউটডোর সাব স্টেশনের উপর তুলনামুলক বেশি হয় । এছাড়া দালানের কার্নিশ, মসজিদ-মন্দির-গীর্জার চূড়া, বড়বড় গাছপালা, বাড়ি ঘর এমনকি মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণী লাইটনিং স্ট্রোকের শিকার হয়। ওভারহেড লাইনের তার আকাশের নীচে খোলা অবস্থায় থাকে। একারণে এসব বৈদ্যুতিক লাইনের উপর যে কোন সময় বজ্রপাত ঘটতে পারে। বৈদ্যুতিক লাইনের উপর বজ্রপাত হলে লাইনের ভোল্টেজ ও ফ্রিকুয়েন্সি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। ক্ষণস্থায়ী এই হঠাৎ ভোল্টেজ বৃদ্ধিকে সার্জ (Surge) বলে। ঐ সার্জ কারেন্ট বৈদ্যুতিক লাইন এবং লাইন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া হয় এসব যন্ত্রপাতির মধ্যে প্রবেশ করলে সেগুলি পুড়ে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। এসব ক্ষতির হাত থেকে সরঞ্জামাদি রক্ষা করার জন্য দুই রকম ব্যবস্থা নেয়া হয়। লাইনের উপরে আর্থ তার সংযোগ করা।
(১) লাইটনিং অ্যারেস্টার ব্যবহার করা। ওভার হেডলাইনে আর্থের তার সবচেয়ে উপরে থাকায় বজ্রপাত হলে তা আর্থের ভারের উপরে প্রথমে পড়বে। লাইন কন্ডাক্টরের উপর বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। আর্থের তারে বজ্রপাত হলে সার্জ কারেন্ট সরাসরি মাটিতে চলে গিয়ে যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জামের ক্ষতি রোধ করেতে পারে। কিন্তু যেখানে আর্থের তার টানা হয় না সেখানে লাইটনিং অ্যারেস্টার ব্যবহার করা হয়।
লাইটনিং অ্যারেস্টারের প্রধান কাজ হলো লাইনে বজ্রপাত হলে সার্জ কারেন্টকে সরাসরি মাটিতে নিয়ে যাওয়া। একাজের জন্য লাইটনিং অ্যারেস্টারের মোটামুটি তিনটি গুণ থাকা আবশ্যক। যেমন-
(১) প্রত্যেক অ্যারেস্টারে এক বা একাধিক ফাঁক (gap) থাকবে যার ভেতর দিয়ে আর্ক হবে।
(২) আর্ক নেভানোর ব্যবস্থা;
(৩) স্বাভাবিক অবস্থায় অ্যারেস্টারের মধ্য দিয়ে কোন কারেন্ট প্রবাহ না হওয়া।
বিভিন্ন ভোল্টেজে বিভিন্ন ধরনের লাইটনিং অ্যারেস্টার ব্যবহৃত হয় । এল.টি. লাইনে যে অ্যারেস্টার ব্যবহৃত হয় তার নাম হর্ণ-গ্যাপ অ্যারেস্টার।
সর্বাধিক প্রচলিত লাইটনিং অ্যারেস্টার হলো বর্ণ-গ্যাপ অ্যারেস্টার। ২.১২ নং চিত্রে হর্ণ-গ্যাপ অ্যারেস্টার দেখানো হয়েছে। একে এল.টি. লাইনে ব্যবহার করা হয়। এধরনের অ্যারেস্টারে হর্ণ এর মত দুইটি বাঁকানো তার থাকে। তার জ্বরের নিচের দিক থেকে উপরের দিকে দূরত্ব বাড়তে থাকে। বর্ণের নিচের দিকে এমনভাবে ফাঁকা রাখা হয়-
যেন সাধারণ লাইন ভোল্টেজের সেড় বা দ্বিগুণ ভোল্টেজ না হলে কারেন্ট ঐ ফাঁকা জারণা অতিক্রম করতে না পারে। হর্ণ দুইটি একটি ইনসুলেটরের উপর বসানো থাকে। একটি হর্ণকে আর্থের তার দিয়ে কোনো একটি আর্থ ইলেকট্রোডের সঙ্গে জুড়ে দিতে হয়। অপর হর্ণটিতে এক দিকে লাইনের তার এবং অন্যদিকে যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম প্রভৃতি থেকে আগত তার সংযুক্ত থাকে। অ্যারেস্টার কে আরো কার্যকরী করার জন্য পাতি এবং হর্ণের মধ্যে একটি চোকিং করে লাগানো থাকে। এর ফলে লাইটনিং কারেন্ট (সার্জ কারেন্ট) যন্ত্রপাতির দিকে যেতে বেশি বাঁধা পায়। যখন লাইনের ভোল্টেজ স্বাভাবিক থেকে দ্বিগুনেরও বেশি হয় তখন এই ফাঁকের মধ্যে স্ফুলিঙ্গ (arc) সৃষ্টি হয় এবং কারেন্ট ভূমিতে চলে যায়। খুনিদের জায়গায় বাতাস গরম হয়ে উপরের দিকে যেতে থাকে এবং তাতে আর্ক ও উপরের দিকে উঠে যেতে থাকে। স্ফুলিঙ্গ যত উপরের দিকে ওঠে তত লম্বা হয়ে যায় এবং এক সময় দৈর্ঘ্য এত বেশি হয় যে লাইন ভোল্টেজ স্কুলিজটিকে আর ধরে রাখতে পারেনা। ফলে এক পর্যায়ে এটি নিভে যায় ।
দেখা গেছে, হর্ণ-গ্যাপ অ্যারেস্টারের মধ্য দিয়ে আনুমানিক ১০ অ্যাম্পিয়ারের বেশি কারেন্ট গেলে স্ফুলিঙ্গ বহু হয় না। কারেন্টের মান ১০ অ্যাম্পিয়ারের মধ্যে রাখার জন্য হর্ণগ্যাপ অ্যারেস্টারের সঙ্গে প্রয়োজন মতো রেজিস্ট্যান্সকে সিরিজে সংযোগ করা হয়।
Read more